বর্তমান ঘটমান, পুরাতন ঘটনাপ্রবাহের আলোকে:-
বর্তমান অনলাইনের/ডিজিটাল যুগে; আমাদের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, ঠিক তেমনি একদিক দিয়ে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণও বটে।
তবে কোন কোন ভাবে ক্ষতি হতে পারে, তা জানতে পারলেই আমরা এর আসল সুবিধা ভোগ করতে পারবো। নাহলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এবং মনে মনে ভাববো হয়তো, এই ডিজিটালের থেকে আমার সেই এনালগ যুগেই ভালো ছিলো।
আগে চুরি, ডাকাতি কিংবা ছিনতাই করতে হলে চোর, ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীকে অনেক কষ্ট এবং সাথে প্রচুর অনুশীলন করতে হতো। চোরকে রাত জাগতে হতো, গায়ে তেল মাখতে হতো যাতে কোনোভাবে ধরা পড়লেও, পিছলে পালাতে পারে। ডাকাতকে প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে, অনেক দক্ষতার সাথে কোন মিশনে নামতে হতো। ঠিক একইভাবে ছিনতাইকারীকেও অনেক দক্ষতার সাথে অপারেশন সাকসেসফুল করতে হতো। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে সেই বিষয়টির কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তবে, আমি বলবোনা যে ডিজিটালি কাজটি করা খুবই সোজা। আমি বলবো, ডিজিটাল চুরি, ডাকাতির সাথে এদেশের মানুষ অতোটা পরিচিত এখন পর্যন্ত হয়নি, এজন্যই বিষয়টি একটু সহজ বলে আমি ধারণা করছি।
এনালগ যুগে আমাদের থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র কিংবা টাকা-পয়সা চুরি করতে তাদের রীতিমতো হাঁপিয়ে যেতে হতো। কারণ, আমরা তো সে ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর। সহজেই কাউকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র কিংবা টাকা-পয়সা দিবোনা। যেহেতু আমরা এই ডিজিটাল যুগের সাথে অতোটা পরিচিত না, সেহেতু কিভাবে কাগজপত্র কিংবা টাকা-পয়সা লুণ্ঠনকারীরা তাদের ঘরে বসেই লুণ্ঠন করবে তা আমাদের কাছে অপরিচিত বিষয়।
এখন তারা, আমাদের থেকে কিভাবে টাকা পয়সা লুণ্ঠন করে নিবে?
এই বিষয়টি ক্লিয়ার করি:
আজকাল উপবৃত্তি, চাকুরির টাকা, বিভিন্ন ভাতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের টাকা সবকিছু মোবাইলের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়।
কোন বিকাশ দোকান থেকে লুণ্ঠনকারীরা আপনার নাম্বারটি নিয়ে, আপনাকে ফোন করে বিভিন্নধরনের প্রলোভন দেখাবে কিংবা ভয় দেখিয়ে আপনার থেকে টাকা হাতিয়ে নিবে। এ সম্পর্কে কিছু উদাহরণ দেই:-
১. আপনাকে কল দিয়ে বলবে, আপনি তো বিশাল অফার পেয়েছেন। অমুক কোম্পানির অমুক বিষয়ের কারণে আপনি জয়ী হয়েছেন। তাই অফারটি পেতে আমাদের এই নাম্বারে প্রসেসিং ফি বাবদ এতো টাকা প্রেরণ করুন। এটি আপনার টাকা মেরে খাওয়ার মজার একটি টেকনিক।
২. আপনি অমুক জায়গা থেকে টাকা পাচ্ছেন তাই আপনার একাউন্টটি নতুন করে হালনাগাদ করতে হবে। এজন্য আপনার ফোনে একটি পিনকোড যাবে সেটি আমাদের বলুন৷ এভাবে তারা পিন নিয়ে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করে আপনার টাকা পুরোটাই গায়েব করবে।
৩. আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনার একাউন্টটি কিছু টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এবং আপনাকে দেখতে বলা হবে যে, দেখুন আপনি আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারেন কি না। তখন আপনি দেখবেন সত্যিই তো একাউন্টে প্রবেশ করা যাচ্ছেনা। তারপর তারা বলবে, আপনার একাউন্ট সচল করতে আপনার পিনকোডটি বলুন আমরা সচল করে দিচ্ছি। এভাবে পিনকোড দিলে আপনার একাউন্টের টাকা দেখবেন উধাও।
৪. আমরা বিকাশ থেকে বলছি, আপনার একাউন্টের টাকাটি ভুল করে টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে রিমুভ হয়ে গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষনাৎ আপনাকে ফোন দিলাম। আপনি যদি টাকাটি ব্যাক পেতে চান তাহলে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু কাজ করতে হবে। আপনি আপনার পিনকোড না বলেন তবে, একটি কাজ করেন পিনকোডের সাথে ৫ গুণ করেন এরপর ১০ বিয়োগ করে এখন সেই সংখ্যাটি বলুন।
ধরুন আপনার পিনকোড ১২৩৪৫. এখন আমরা যদি এই অনুযায়ী অঙ্ক করি তাহলে ১২৩৪৫×৫= ৬১৭২৫ এবার বিয়োগ ১০;
৬১৭২৫-১০= ৬১৭১৫ এই সংখ্যাটি যখন বলবেন তখন সে প্রথমে ৬১৭১৫+১০= ৬১৭২৫ এরপর ৬১৭২৫÷৫= ১২৩৪৫ আপনার পিনকোড পেয়ে গেলো।
৫. আপনি আপনার একাউন্টে ১০ হাজার টাকা ক্যাশইন করলেই, আপনি সাথে আরও ২০ হাজর টাকা পেয়ে যাবেন। তখন আপনি ভাববেন আরে আমার একাউন্টেই তো টাকা রাখছি তো প্রবলেম কিসের।
প্রবলেম হলো: সে আপনার একাউন্ট হয়তো কোনভাবে তার আয়ত্ত্বে নিয়েছে এখন আপনার বাকি টাকাও আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছে।
*আপনি একটি কথা ভালোভাবে মাথায় রাখবেন, যারা আপনাকে টাকা দিবে, তারা কখনও আপনার থেকে প্রসেসিং ফি বাবদ টাকা চাইবেনা। আপনার একাউন্টে এতো টাকা রাখলে এতো টাকা পাবেন এমন কোন নিয়ম নেই। আর, বিকাশ থেকে কখনও আপনার পাসওয়ার্ড কিংবা ফোনে আসা পিনকোড জানতে চাইবেনা। তাদের হাতেই সব কন্ট্রোল থাকার পরও, কোন কারণে তারা আপনার কাছে পিনকোড জানতে চাইবে।
বিকাশ কেন, আপনার বাবাও যদি অন্য কোন নাম্বার থেকে কল করে বলে:
বাবা তোর বিকাশ থেকে একটা পিনকোড গেছে সেটা বল, তাহলেও আপনি দিবেননা। আর টেকনিক্যাল কোন প্রবলেম যদি হয়েও থাকে তাহলে বিকাশ আপনাকে ১৬২৪৭ নাম্বার থেকে কল করবে। তবে আপনার সমস্যায়, তাদেরকে নালিশ আপনাকেই করতে হবে, তারা কখনও নিজে থেকে আপনার সমস্যা সমাধান করতে আসবেনা।
এখন ভুলে যদি কোন অঘটন ঘটে যায় কিংবা আপনি যদি ভুল নাম্বারে টাকা সেন্টমানি করে দেন, তাহলে আপনি এক মুহুর্ত দেরি না করে সাথেসাথেই বিকাশের লাইভ চ্যাট কিংবা, ১৬২৪৭ এ কল করে বিস্তারিত জানাবেন। সাথে সেই একাউন্টটি ব্লোক করে দিতে বলবেন। এতে করে সে আর টাকাটি তুলতে পারবেনা এবং আপনি পরবর্তীতে সুপারিশ করা ছাড়া কাস্টমার কেয়ারে গিয়েও তার একাউন্ট সচল করে দিবেনা।
এভাবে আপনি তার থেকে ৫০% টাকা আগে ব্যাক দেয়ার কথা বলবেন এবং আগে ৫০% টাকা দিয়ে বাকিটা একাউন্ট সচল হওয়ার পরবর্তীতে দেয়ার শর্তে, যদি ব্যাক করে তাহলে বিকাশ হেল্পলাইনে তার একাউন্টটি সচল করে দিতে বলবেন।
*এরপর আপনাকে অনলাইনে বিভিন্ন প্রডাক্ট কিংবা সার্ভিস দেয়ার নাম করে অনেকেই টাকা মেরে দিবে। এজন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:-
১. আপনি যার থেকে কোন সার্ভিস নিতে চাচ্ছেন তার ওয়েবসাইট আছে কি না। আর সাইটটি টপ লেভেল (.com, net, org, info) এগুলো ডোমেইনে কি-না। ওয়েবসাইটটি প্রফেশনাল কি-না দেখবেন।
২. রিভিউ থাকলে তা আসল রিভিউ কি-না সেটি দেখবেন। তা জানতে রিভিউ প্রদানকারী লোকগুলোর আইডি সচল কি-না তা দেখা উচিত। নাকি ২-৩ বছর আগে পোস্ট করেছে এমন আইডি থেকে রিভিউ দিয়েছে কিংবা নতুন আইডি খুলেই রিভিউ দিয়েছে।
৩. যাকে পেমেন্ট করবেন, তার আইডিটি আসল কি না, প্রতিনিয়ত আইডিতে একটিভ থাকে কিনা, নতুন খোলা কিংবা অনেক পুরাতন আইডি কি-না তা দেখবেন। যদি নতুন কিংবা আইডিতে ভালো রেসপন্স না দেখেন তাহলে তার থেকে একটু দূরে থাকাই ভালো।
৪. আইডিটির সাথে কোন গ্রুপে পরিচয় হলে, সেই গ্রুপের এডমিনকে ৩ নং ব্যক্তি বানিয়ে আপনার টাকা এবং তার প্রডাক্ট সেই এডমিনকে দিয়ে এক্সচেঞ্জ করবেন। এজন্য অবশ্যই গ্রুপটি বড় এবং একটিভ থাকতে হবে।
৫. কারও সার্ভিস সম্পর্কে আপনার পূর্বপরিচিত থাকলে তার থেকে কোন প্রবলেম ছাড়াই নিতে পারবেন।
*আপনার আইডি, মেইল কিংবা কোন একাউন্ট সিকিউর রাখতে পাসওয়ার্ড সবসময় স্ট্রং রাখবেন। কখনওই নাম, ফোন নাম্বার, গ্রামের নাম, প্রেমিক-প্রেমিকার নাম, জন্মতারিখ হুবহু রাখবেননা, যেটি সহজে অনুমান করা যেতে পারে।
পাসওয়ার্ডের সাথে @#%&* এইরকম চিহ্ন, ছোট/বড় অক্ষর মিক্সড করে রাখবেন। আর যেগুলোতে টুস্টেপ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা আছে সেখানে সেটি অন করে দিবেন। এতে করে কোনোভাবে পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার ফোনে আসা কোডটি সাবমিট না করা পর্যন্ত লগইন হবেনা।
(রাফিউল আহসান)